Chattogram24

Edit Template
Search
Close this search box.
বৃহস্পতিবার, ৯ই মে ২০২৪

আহা কেমন মানুষ আমরা!

Author picture
স্টাফ রিপোর্টার

আহা কেমন মানুষ আমরা!

আমার নিজ গ্রামের প্রধান হাট বা বাজারটির নাম মরিচ্যা বাজার। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের অন্যতম বড় বাজার এটি। আমাদের গ্রামে যা ফসল বা মৌসুমি সবজির চাষ হয় তার বেচা কেনার অন্যতম স্হান হচ্ছে এ বাজারটি।

স্বাধীনতার পর থেকে আমার বসবাস কক্সবাজার শহরে। সপ্তাহে গ্রামের বাড়িতে গেলে পরিবারের ক্ষেত খামারে যেটা পেতাম না সেটা মরিচ্যা বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসতাম। এখন থেকে আরও অন্ততঃ মাস দেড়েক সময় আগেই মরিচ্যা বাজারে স্হানীয় ভাবে উৎপাদিত মৌসুমি সবজি তরিতরকারি কেনাকাটা হত।

কিন্তু এখন মরিচ্যা বাজারে লোকাল বা বাজারটির আশে পাশের গ্রামের গৃহস্থালি পরিবারের উৎপাদন করা কোন সবজি পাওয়া যায়না। গেল মাস থেকে বাজারটির রবিবার ও বুধবারের সাপ্তাহিক বাজারের দিন অনেক খোঁজাখোজি করেছি কিন্তু স্হানীয় উৎপাদন করা সবজির দেখা মিলে নি। কত চেষ্টা করলাম দেশি বেগুন, মুলা,টমেটো, মরিচ ও ধন্যাপাতার- কিন্তু নেই।

বিক্রেতারা বলেন, সব আসে দোহাজারি ও চকরিয়া থেকে। তাও আবার সবগুলোই হাইব্রিড। দেশীয় কোন সবজি ঔষধ হিসাবে খাবার জন্যও মিলে না। এমন সময়ে গ্রামের বাড়ির খাল পাড়ের যে ভুমি আমাদের রয়েছে সেখানে গেলে বাহারি সবজি ক্ষেতের কত সুগন্ধি পেতাম। মা সেখানে এমন কিছুই বাকি রাখত না যা ক্ষেতে পাওয়া যেত না। আবার সারা বছরের আলু,মরিচ এ ক্ষেত থেকেই মা সংগ্রহ করে রাখতেন।

মা আজ নেই। তার সাথে সবই গেছে। এখন খাল পাড়ের সেই উর্বর ভুমি খালি পড়ে আছে। শুধু আমাদের নয় আশেপাশের কোন ক্ষেতই আর নেই।
পাড়ার চাচা চাচিদের কাছে জানতে চাইলাম, কেন মৌসুমি ক্ষেত করা হয়না। সবারই যেন মন মরা ভাব। কোন গ্রহণযোগ্য কারণও খুঁজে পাইনা ক্ষেত না করার। এ কারণে মরিচ্যা বাজারে স্হানীয় উৎপাদিত তরিতরকারি পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের পান বরজেও নানা রকমে সবজিহত। বিশেষ করে থানকুনি পাতা এবং মরিচ ( ধাওন্যা মরিচ)। কিন্তু এখন বরজও নেই।

ঘরে ঘরে কেবল মানুষ বাড়ছে। জমি কমছে ক্রমশ। অথচ উৎপাদন বলতেও নেই। আগে আমার পরিবারে কোনদিন হাটবাজার থেকে তরিতরকারি কিনে আনতে হয়নি। কিনে আনার বিষয়টি ছিল কুলক্ষণ। আর আজ কিনে আনাটাই যেন আমাদের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের এলাকায় আগে প্রতিটি পরিবারে মৌসুমি ক্ষেত হত। তখন আমাদের এরকম হা-হুতাশ ছিল না। এখন আমরা কেও চাষতো করিইনা বরং বাজারে কেজিতে ৬০ টাকায় মুলা আর ৮০ টাকায় হাইব্রিড বেগুন কিনে গালি দিয়ে চলি সরকার কে। যতবার কিনছি ততবারই গালি দিচ্ছি।

এমনকি বাজার থেকে গালি দিতে দিতেই পলিথিন ভরা তরকারির পুটলিটা নিয়ে ঘরে ফিরি। একবারও কি ভাবছি আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরে চলেছি। তবুও কিন্তু নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছি না। আহা কেমন মানুষ আমরা !

তোফায়েল আহমদ,

কক্সবাজার ২০-০১-২০২৪