Chattogram24

Edit Template
Search
Close this search box.
বৃহস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪

চেয়ার না দেয়ায় ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ, সড়ক অবরোধ

Author picture
স্টাফ রিপোর্টার

শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রথম বর্ধিত সভায় বসার চেয়ার না দেয়ায় পদত্যাগ করেছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মইন উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যাক্তিগত আইডি থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

এই ঘটনার পরপরেই প্রতিবাদ জানিয়ে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে মঈনের অনুসারীরা। এতে সড়কের দু’প্রান্তে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগানে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ মারুফ আদনানের জেলা কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে বিলুপ্ত করার দাবী জানান।

এসময় বিক্ষোভকারী মইন উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, বর্ধিত সভা গতকাল হওয়ার কথা থাকলেও জেলা ছাত্রলীগ আজ লোক দেখানো একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করেন। এসময় সিনিয়র সহ-সভাপতি মইন উদ্দিন উপস্থিত হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাকে অপমান করার উদ্দেশ্যে বসার জন্য একটি চেয়ারও দেন নি। অথচ জুনিয়র অনেক নেতাকর্মী সামনের সারিতে বসা ছিলো। এমন ক্ষোভে সভা থেকে ফিরে তাৎক্ষণিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন মইন উদ্দিন। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদকের মারুফ আদনানের স্বেচ্ছাচারীতার প্রতিবাদ জানাতে তারা রাস্তায় টায়ার জালিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছেন বলে জানান তিনি।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটায় কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভায় নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার জন্য কক্সবাজার জেলা শাখার আওতাধীন সকল উপজেলা, কলেজ, পৌরসভা ও মাদ্রাসার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক, যুগ্ম-আহবায়ক এবং পদপ্রত্যাশী সকলকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান।

বর্ধিত সভায় এসে সভাপতি-সম্পাদকের উপস্থিতি না পেয়ে ফিরে যাওয়া ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সবাইকে বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকলে বললেও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কেউ আসেনি। বর্ধিত সভা স্থগিত করা হয়েছে এমন কাউকেও বলা হয়নি। দূর-দূরান্ত থেকে নেতাকর্মীরা এসে সভাপতি-সম্পাদকের এমন কান্ডজ্ঞানহীন আচরনে তারা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন বলে তারা দাবি করেছেন।

তাদের মতে, সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বর্ধিত সভার আহবান করলেও সভাটি বাস্তবায়ন না করে রাজধানীতে কেন্দ্রিয় নেতাদের পেছনে ঘুরাঘুরি করছে। এ ঘটনায় নেতাকর্মীদের আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলে পরদিন বিমানযোগে ঢাকা থেকে ফিরে তড়াঘড়ি বর্ধিত সভার আয়োজন করেন সভাপতি-সম্পাদক।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান কমিটি পাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কক্সবাজারের সাংগঠনিক অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। অনেকটা হযবরল হয়ে আছে এখানকার জেলা, উপজেলা, পৌর ও কলেজ কমিটিগুলো। এছাড়া জেলার একাদিক উপজেলা কমিটি, চারটি পৌর ও পাঁচটি কলেজ কমিটির অধিকাংশই মেয়াদ উত্তীর্ণ। কোন কোন শাখায় আবার কমিটিই নেই।

আবার যেসব শাখার কমিটি তারা করছেন সেসব কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদকদের অনেকেরই গঠনতান্ত্রিক বয়স ছাপিয়ে গেছে। কেউ কেউ বিয়ে করে সংসারীও হয়েছেন, আবার অনেকেরই এখন ছাত্রত্বও নেই। বিপুল টাকার বিনিময়ে বয়সের দিক থেকেও কেউ কেউ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংসদের সভাপতি এবং সম্পাদকের চেয়ে জ্যেষ্ঠতমকেও নেতা বানিয়েছেন।

পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মইন উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের আয়োজনে আগামী ১ সেপ্টেম্বর সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহণ করার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ প্রথমবারের মত বর্ধিত সভার আয়োজন করেন এবং সবাইকে উপস্থিত হতে বলেন। সভায় আমিও অংশগ্রহণ করি। কিন্তু সাদ্দাম ও মারুফ আমাকে বসার জন্য একটি চেয়ারও দেননি। দশ মিনিট দাড়িয়ে আমি অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছি। তাদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ স্বরুপ আমি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।

এদিকে, সাংগঠনিক কাজের কোন অগ্রগতি না থাকলেও নানা বির্তকের জন্মদিয়ে রীতিমত সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদক। শুধু তাই নয়, তাদেরকে দৌঁড়ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সরকারি অফিসের ঠিকাদারী কাজ নিয়ে। তাদের ফুসরত নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যক্তিগত কাজের চাপে।

যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের। এবার উপজেলা পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন তারা। অছাত্র, বিএনপি ঘরোয়ান ছেলেদের নিয়ে উপজেলা কমিটি গঠন হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলেছেন জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সাথে তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারাকে চরম ব্যর্থতা বলেও মনে করেন তারা। এ অবস্থায় দলকে সুসংগঠিত ও শাক্তিশালী করতে গঠনতন্ত্র ধারা মতে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান বলেন, বিকাল চারটায় আমাদেন বর্ধিত সভা শুরু হয়। মইন এর কিছুক্ষণ পরে সভাস্থলে আসেন। সিনিয়র সব নেতাকর্মী বসে যাওয়ায় তাকে চেয়ার দিতে দেরী হয়। এ কারণে তিনি চলে যান। অথচ তাকে বসতে চেয়ারের ব্যবস্থা করতে দুই মিনিট সময় চেয়েছেন সভাপতি সাদ্দাম।

গতকালের ডাকা বর্ধিত সভা আজকে কেন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন ভাইয়ের সাথে দেখা করার তারিখ নির্ধারণ ছিল। কিন্তু তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরতে দেরী হওয়ায় তারিখটি পরিবর্তন করে গতকাল ২৩ আগস্ট দেখা করার শিডিউল দেন। এ কারনে গতকাল আমাদের বর্ধিত সভা করা সম্ভব হয়নি। তাই পরদিন বর্ধিত সভা হবে জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, টায়ার জালিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ ও অবরোধের খবে পেয়ে আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। তাদের টিম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যানজট নিরসনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।