Chattogram24

Edit Template
Search
Close this search box.
রবিবার, ১২ই মে ২০২৪

বান্দরবান শেষ হলো অন্যতম ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব

Author picture
স্টাফ রিপোর্টার

বান্দরবান প্রতিনিধি:

ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বান্দরবানের শেষ হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর ও পিন্ডদানের দানোসৎসব। মূলত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে পূর্ণিমা তিথিতে মাসব্যাপী এই কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাছাড়া এই অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে ত্রি-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ধর্মাবলম্বীগণ পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রীও দান করে থাকেন।

জানা গেছে, ২৫ নভেম্বর শনিবার কঠিন চীবর দানের অনুষ্ঠানকে ঘিরে উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহার ও রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে ঢল নামে। বিহারে বিহারে চীবর বুনতে অংশ নেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা নারীরা। চীবর মানে কাপড়। যা বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ পরিধান করে থাকেন। বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারীরা সারারাত চর্কার মাধ্যমে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে নতুন সুতায় রঙ লাগিয়ে চীবর কাপড় বুনেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর (কাপড়) তৈরি করে সোমবার ভোরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দানের মাধ্যমে উৎসর্গ করেন।

বৌদ্ধ শাস্ত্রে বলা আছে, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধের মহা পুণ্যবতী নারী বিশাখা দেবী এই কঠিন ব্রতী পালন করে বুদ্ধকে চীবর দান করেছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবতর্ক গৌতম বুদ্ধের আমল থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই তিথিতে কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করে আসছেন। সকলের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় এই চীবর দান করে থাকেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নর-নারীরা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, আষিনী পূর্নিমা ১৫ দিন পর উৎসবকে ঘিরে প্রত্যেক বিহারে বিহারে মাসব্যাপী চলে এই ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দান। এদিনে প্রত্যেক নারীরা পূন্যলাভের আশায় বিহারের সমাবেত হন। অংশ নেন চীবর বুনতে। সর্বশেষ পিন্ডদানের বিভিন্ন ফলমুল, অর্থ দানের মধ্যে দিয়ে পালন করা হয় কঠিন চীবর দান।

তিতিম্যা,মনিসাই, ও ডলিপ্রু মারমা জানান, বছর শেষে তারা এইদিনটি জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। এদিনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ভিক্ষুদের মাঝে স্বার্ধনুযায়ী যা পারেন তাই দান করে থাকেন। যাতে পূণ্যলাভের আশায় আগামী প্রজন্মে যেন ভালো থাকেন।

রাজগুরু বৌদ্ধবিহারে ভিক্ষু নাইন্দা চেরিয়া বলেন, কঠিন চীবর দান মূলত পালন করা হয় তিনমাস বর্ষবাসে পর ভিক্ষুদের যেকোন ধরনের অপরাধ ও পারাচীকা তৈরী হয়। এসব পারাচীকাকে পরাবোধ করা জন্য এই কঠিন চীবর দান পালন করা হয়। এই কঠিন চীবর দানের ফলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের যে পাচটি পরাজয় বা অপরাধ তৈরী হয়। সেটি থেকে মুক্তি পেতে দায়ক-দায়িকা ও ভিক্ষুরা এইদিনে দানের মাধ্যমে পুন্যলাভের জন্য চীবর দান পালন করে থাকেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাজগুরু বৌদ্ধ বিহার থেকে সারিবদ্ধভাবে পিন্ডচরনে বের হন কয়েকশত ভিক্ষুরা। এসময় নারী -পুরুষ থেকে শুরু করে পূন্য লাভের আশায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে সকল ধরনের মানুষ বিভিন্ন কিছু দান করতে অংশ নেন। কেউ অর্থ,ফলমুল আবার কেউ স্বার্ধনুযায়ী বিভিন্ন খাবার দান করতে থাকেন। এদিনে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সকল মানুষরা নিজেদের ঐতিহ্য পোশাক পরিধান করে থাকেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পুরো শহর প্রদক্ষিণ পর আবার বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে সমাবেতন হন। বিকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় ধর্মদেশনা প্রদান করেন।